শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৩:০৮ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে হু হু করে করোনায় আক্রান্তের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঈদের পর থেকে গত তিন সপ্তাহে এ উপজেলায় করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। পার্শ্ববর্তী রামগতি উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৩০ জন হলেও কমলনগর উপজেলায় এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯ জনে। এমন পরিস্থিতিতে করোনার সংক্রমণ এড়াতে কঠোর লকডাউনের দাবি জানিয়েছেন এলাকার সচেতন ব্যক্তিরা। পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে অতিদ্রুত লকডাউন ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরু থেকে উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কমলনগরে করোনাভাইরাাসের সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিলো। ১৬ এপ্রিল এখানে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ঈদুল ফিতর (২৫ মে) পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত রোগী ছিলো মাত্র আটজন। কিন্তু ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জসহ করোনার রেডজোন এলাকা থেকে আসা মানুষদের অবাধ চলাফেরায় এখানে সংক্রমণ হু হু করে বেড়ে যায়। প্রথম ৪০ দিনে এখানে মাত্র আটজন করোনা রোগী ধরা পড়লেও পরবর্তী ১৮ দিনে শনাক্ত হয় ৪১ জন। রোগী বেড়ে যাওয়ায় করোনার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রস্তুত করা ২০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ডেও এখন স্থান সংকুলান হচ্ছে না। চিকিৎসক, পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর লকডাউন চাচ্ছেন এলাকার সচেতন ব্যক্তিরা। ইতোমধ্যে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা চেয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অনেকে।
বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ’র কমলনগর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক প্রভাকর মণ্ডল বলেন, পার্শ্ববর্তী রামগতি উপজেলায় এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ জন করোনা রোগী ধরা পড়েছে। অথচ তুলনামূলক ছোট উপজেলা হলেও কমলনগরে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯ জন। দিন দিন আক্রান্ত যেভাবে বাড়ছে এভাবে চলতে থাকলে এ উপজেলা করোনার হটস্পটে পরিণত হবে। তাই এটার লাগাম টানতে এখনই কঠোর লকডাউনের প্রয়োজন।
কমলনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি এমএ মজিদ বলেন, এ উপজেলাকে করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে বাঁচাতে কঠোর লকডাউনের বিকল্প নেই। তবে শুধু লকডাউন ঘোষণা দিলেই এর কার্যকারিতা আসবে না। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ সকলে আন্তরিকভাবে এটাকে বাস্তবায়ন করতে হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবু তাহের জানান, কমলনগরে করোনায় সংক্রমণের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে স্বল্প সংখ্যক স্টাফ নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে চরলরেন্সে ১৯ জন, চরফলকনে ১৩ জন ও হাজিরহাটে ১২ জনসহ তিনটিতেই আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ জন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ওই তিন ইউনিয়নকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে ১৫ দিনের কঠোর লকডাউনের ঘোষণার দাবি জানান তিনি।
কমলনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ নুুরুল আবছার জানান, শুরু থেকেই পুলিশ প্রশাসন করোনা নিয়ন্ত্রণে কঠোরভাবে কাজ করে আসছেন। দায়িত্বপালন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে থানার আটজন স্টাফ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবুও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত হলে তা বাস্তবায়নে পুলিশ প্রশাসন সাধ্যমতো চেষ্টা করবে।
করোনা প্রতিরোধ কমিটির উপজেলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, এ উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি তাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীর কঠোর লকডাউনের দাবির বিষয়টি নিয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানান।
Leave a Reply