বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ০৯:৪২ পূর্বাহ্ন

বটতলার বটগাছটিই আর নেই!

নিজস্ব প্রতিবেদক : লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলেকজান্ডার ইউনিয়নের বটতলা এলাকার অর্ধশত বছর পুরনো বটগাছটি আর নেই। সোমবার ভোরে বটতলার ওই বটগাছটি কেটে নিয়েছে স্থানীয় একটি চক্র। নিজেদের প্রয়োজনে বন বিভাগের বিলুপ্তপ্রায় এ গাছটিকে হত্যা করেছে তাঁরা। এতে করে এখন থেকে প্রচণ্ড খরতাপে নিজের দেহ থেকে বের করা সবুজ লতাপাতা দিয়ে আর সুশীতল ছায়া দেবে না বটগাছটি। অলস দুপুরে ডালপালা নাড়িয়ে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেবে না ক্লান্ত পথিকের ঘামঝরা শরীরে।
এদিকে, বটতলার ঐতিহ্য বটগাছটি কেটে ফেলায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে সাধারণ মানুষদের মধ্যে। আবেগ ও স্মৃতিতে গেঁথে থাকা এ গাছটিকে হত্যা করায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তাঁরা।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়নের জনতা বাজার-স্লুইচ গেট সড়কের (পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ) চার রাস্তার মুখের স্থানটি বটতলা নামে পরিচিত। স্বাধীনতার আগে ওই স্থানে জন্ম নেওয়া একটি বটগাছের নাম অনুসারেই জায়গাটি বটতলা নামে পরিচিত। দীর্ঘকাল ধরে গাছটির ছায়ার নিচে অনেকে বিশ্রাম নিতেন। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে গাছটিকে ঘিরে সেখানে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও।
জানা গেছে, ওই বেড়িবাঁধের বনবিভাগের রোপণকরা বিভিন্ন গাছ কয়েক মাস আগে কেটে নেওয়ার ইজাড়া দেওয়া হয়। তবে, বিলুপ্তপ্রায় বৃক্ষ হওয়ায় ওই বটগাছটি এবং কিছু ঔষধি গাছ বনবিভাগ ইজাড়ার বাইরে রাখেন। কিন্তু এর পরও এলাকার কিছু লোভী ব্যক্তি বটগাছটি কেটে আত্মসাৎ করার পাশাপাশি গাছটির নিচের পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করার জন্য গাছটি হত্যা করেছেন। ইতোমধ্যে গাছটির কেটে নেওয়ার স্থানে দোকানঘর তৈরির সরঞ্জামও রেখেছেন তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দা মিনার উদ্দিন জানান, তাঁর বয়স এখন ৪৫ বছরের কাছাকাছি। তিনি ছোটবেলা থেকেই ওই বটগাছটি দেখে এসেছেন। ‘বটতলার ঐতিহ্য’ এ বটগাছটি কেটে ফেলায় বড়ই মর্মাহত হয়েছেন তিনি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকার অনেকেই জানান, গাছটিকে ঘিরে তাঁদের অনেক স্মৃতি রয়েছে। কিন্তু গাছটিকে হত্যার মাধ্যমে আজ সব শেষ হয়ে গেছে।
বনবিভাগের স্থানীয় সুফলভোগী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব হাওলাদার জানান, বটগাছটি বটতলা এলাকার ঐতিহ্যের বাহক। কিন্তু সেই গাছটি কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ করে একটি চক্র কেটে ফেলেছেন। এ ঘটনায় সুফলভোগী সমিতির সদস্যরা ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেছেন।
পরিবেশ রক্ষায় কাজ করা এবং সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) লক্ষ্মীপুর জেলা সভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, মানুষের বেঁচে থাকতে হলে গাছের কোনো বিকল্প নেই। গাছ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। মানুষের ছায়াদানকারী ও পাখিদের আবাসস্থল ওই গাছটি কেটে নেয়া অনভিপ্রেত। যেখানে পরিবেশ রক্ষায় সরকার বিলুপ্তপ্রায় গাছ রক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন; অথচ সেখানে এ ধরনের কর্মকা- কোনো মতে মেনে নেওয়ার মতো নয়। তাই, ঘটনাটি তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
বনবিভাগের রামগতি উপজেলা বন কর্মকর্তা আবদুল বাছেত জানান, মানুষের উপকারী এবং বিলুপ্তপ্রায় গাছ হওয়ায় ওই বটগাছটি রক্ষায় তাঁরা এটিকে টেন্ডারের বাইরে রেখেছেন। অথচ, সেই গাছটি কেটে ফেলা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
জেলা বন কর্মকর্তা মো. ফিরোজ আলম বলেন, ঘটনাটি শুনে উপজেলা বন কর্মকর্তাকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কেটে নেওয়া বটগাছটির কিছু খণ্ড জব্দ করা হয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় সরকারি ওই গাছটি কেটে নেওয়াদের ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না।
এ ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম শান্তুনু চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা দিয়েও তাঁর কোনো সাড়া মেলেনি।

নিউজটি শেয়ার করুন:


Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2018 Priyo Upakul
Design & Developed BY N Host BD
error: Content is protected !!