দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে চললেও চরম অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছেন লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার সংবাদপত্র বিক্রেতা আব্দুশ শহীদ।
ঝড়-বৃষ্টি ও প্রচন্ড রোদ উপেক্ষা করে বিরামহীন ছুটে চলা শহীদ প্রতিদিনের তাজা খবর নিয়ে ছুটে চললেও তার খবর রাখেনা কেউ।
অতি সম্প্রতি উপজেলা সদর আলেকজান্ডার শহরে গেলে কথা হয় আব্দুস শহিদের সঙ্গে। খোঁজ খবর নেওয়ার আলাপকালে শহিদ তার চরম দুর্দিনের কথা তুলে বলেন,
স্ত্রী, ৫ মেয়ে ২ ছেলে নিয়ে তার সংসার। উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়নের বালুরচর এলাকার সোনালী গ্রামের নদীর তীরে একটি ঝুপড়ি ঘরে তার বসবাস। শারীরিক নানা রোগ ব্যাধি নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে পত্রিকা বিক্রি থেকে প্রাপ্ত কমিশন নিয়ে সংসার পরিচালনা করতে হয় তাকে। দৈনিক নয়া দিগন্ত, ইনকিলাব, সংগ্রাম, ইত্তেফাক সহ পুরনো পত্রিকা গুলোর সাথে নতুন অন্যান্য পত্রিকা বিক্রি করছেন। প্রতিদিন পত্রিকা আসার সাথে সাথে উপজেলা প্রশাসনের সকল দপ্তরে দেশের নানান খবর নিয়ে ছাপা পত্রিকা কপি নিয়ে হাজির হন শহীদ। প্রতিদিন সকাল হলেই উপজেলার কর্মকর্তা ও পাঠকরা সংবাদপত্র বিক্রেতা আব্দুস শহীদের আসার অপেক্ষায় থাকেন।
নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন মাসে ১০-১৫ দিন পত্রিকা বিক্রি করেন। বাকী সময়ে অসুস্থতার কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না তিনি। আর তাতে পাঠক পত্রিকা পড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
উপজেলার মেঘনা নদীর উপকূল সংলগ্ন তার বসত বাড়ি। নদী ভাঙনের মুখে রয়েছে বাড়িটি। যেকোন সময়ে ভেঙে যেতে পারে তার বাড়িটি।
বসত ঘরের উপরের পুরাতন টিন ভেংগে বর্ষার সময়ে প্রচুর পানি পড়ে। বর্তমান ডিজিটাল সময়ে এসে প্রিন্ট পত্রিকার চাহিদা কম থাকায় আয় ইনকাম নেই বললেই চলে। পত্রিকা বিক্রি থেকে যা আসে তা নিয়ে তার সংসার চালানো এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের কাপড় বা অন্য জিনিসপত্র ক্রয় করা শহীদের জন্য সম্পুর্ন কাল্পনিক বিষয়।
তার বসতবাড়ির দুরাবস্থা দেখে স্থানীয় সাংবাদিক আমানত উল্যাহর সহায়তায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল মোমিনের মাধ্যমে সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হলেও খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় নিয়ে মহাটেনশনে আছেন প্রায় ৬০ বছর বয়সী আব্দুস শহীদ।
জীবন সায়াহ্নের এ পর্যায়ে এসে শহীদ আরও বলেন, শারীরিক অক্ষমতা তাকে পেয়ে বসেছে। প্রায় মাসের ১০-১৫ দিন অসুস্থতার কারনে পত্রিকা বিক্রি বন্ধ থাকে তার। টাকার অভাবে নুন্যতম চিকিৎসা সেবা গ্রহন করতে পারছেন না তিনি। এলাকার বিত্তশালী ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে তার আকুল আবেদন আর্থিক সহায়তা পেলে চিকিৎসা নিয়ে আবারও পত্রিকা বিক্রির কাজে নিয়মিত যোগদান করতে পারবেন আব্দুস শহীদ। পরিবারের দু’বেলা দুমুঠো খাবার যোগান দিতে পারবেন শহিদ।
Leave a Reply