বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৫:৪২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : মহমারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেই লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে হঠাৎ করে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চাপ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে শুধু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৯৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। শয্যার চেয়ে রোগী প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রতিদিনের বহি ও অন্তর্বিভাগের রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটসহ প্রচণ্ড গরমের কারণে চলতি মাসের শুরুর দিকে হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৫ এপ্রিল থেকে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০ জনসহ এক সপ্তাহে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪৫ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া ২২টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও চারটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ থেকে সহস্রাধিক রোগী ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৯৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
সরেজমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশী। প্রয়োজনীয় শয্যা না থাকায় অনেক রোগীকে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। এতে করে রোগীসহ তাদের সঙ্গে থাকা স্বজনদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। মেঝে ও বারান্দার নোংরা-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে তাদের।
এ সময় চিকিৎসাধীন কয়েকজন রোগীর স্বজন জানান, বেড না থাকায় বাধ্য হয়ে মেঝের নোংরা পরিবেশে রোগীদের থাকতে হচ্ছে। এতে রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও বেশীরভাগ সময়েই ওষুধ ও স্যালাইন বাহির থেকে কিনে নিতে হচ্ছে।
এদিকে হাসপাতালের সামনের করইতলা বাজারের কয়েকজন ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, অতীতে কোনো সময়ে তারা হাসপাতালে এতো ডায়রিয়ার রোগী দেখেননি। যে কারণে, কলেরার স্যালাইনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বারবার অর্ডার দিলেও ওষুধ কোম্পানিরা পর্যাপ্ত স্যালাইন সরবরাহ করতে পারছেন না বলে তারা জানান।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মীর মোহাম্মদ আমীনুল ইসলাম মঞ্জু জানান, ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। ফলে শয্যা না পেয়ে রোগীরা মেঝেতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। হঠাৎ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় জনবল সঙ্কটের কারণে হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের জানান, একদিকে আবহাওয়ার পরিবর্তনসহ প্রচণ্ড গরম। অপরদিকে, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকা, অনিরাপদ পানি পান ও খাবার খাওয়ার কারণে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে এ ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশী। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ডায়রিয়ার এ প্রকোপ বাড়ায় চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের ওপর চাপ এখন অনেক বেড়েছে। তবুও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
রোগীদের খাবার ও আইভি স্যালাইন সরবরাহের বিষয়ে তিনি বলেন, রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ওষুধের মুজদ অনেকটা কমে এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে অল্প কিছু দিনের মধ্যে ওষুধের সঙ্কট দেখা দিবে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুল গফ্ফার জানান, হঠাৎ করে ডায়রিয়ার এ প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় করোনার পাশাপাশি এ বিষয়েও আলাদা নজর রাখা হচ্ছে।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত থেকে বাঁচতে তিনি খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি পান করাসহ বাইরের যে কোনো খাবার বর্জনের পরামর্শ দেন।
Leave a Reply