শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : পূর্ণিমার প্রভাবে মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ওইসব এলাকার প্রায় অর্ধলাখ মানুষ। জোয়ারের পানির স্রোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দোকানঘরসহ কয়েকশ’ কাঁচা বসতঘরের এবং পানিতে ভেঁসে গেছে অসংখ্য পুকুর ও ঘেরের মাছ। পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে উঠতি আউশ ধান ক্ষেত ও আমন ধানের বীজতলা।
স্থানীয় লোকজন জানান, পূর্ণিমার প্রভাবে বুধবার বিকেলে মেঘনার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট বেড়ে মেঘনা নদীর তীরবর্তী কমলনগর উপজেলার মতিরহাট, নাছিরগঞ্জ, কাদির পণ্ডিতেরহাট, চরজগবন্ধু, মাতাব্বরহাট, লুধুয়া ফলকন ও পাটারীরহাট এবং রামগতি উপজেলার বালুরচর, সুজনগ্রাম, জনতা বাজার, মুন্সীরহাট, সেবাগ্রাম, চরআলগী, বড়খেরী, চরগাজী, চরগজারিয়া, চর মুজাম্মেল ও তেলিরচর এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। পানিতে প্লাবিত হয় মতিরহাট, নাছিরগঞ্জ, কাদির পণ্ডিতেরহাট, মতাব্বরহাট, লুধুয়া বাঘারহাট, জনতা বাজার, মুন্সীরহাট, জনতা বাজার ও চেয়ারম্যান বাজার। মেঘনার ভাঙনে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে যাওয়ায় সহজেই জোয়ারের পানি ঢুকে এলাকাগুলো প্লাবিত হয় বলে তারা জানান।
কমলনগর উপজেলার চরফলকন এলাকার মৎস্যচাষী সিরাজুল ইসলাম জানান, জোয়ারের পানিতে তার তিনটি ঘেরের প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ ভেসে যায়।
একই এলাকার মো. বাহার, রুহুল আমিন ও মো. মানিকসহ আরও অনেকে জানান, জোয়ারের পানিতে তাদের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
রামগতি উপজেলার চরআব্দুল্যাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাজারের ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তছলীম উদ্দিন জানান, জোয়ারের পানিতে ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান বাজার ও জনতা বাজার আড়াই থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বাজারের ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। এছাড়া পানির স্রোতে দোকানঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে তিনি জানান।
ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নটি চারদিকে মেঘনা নদী বেষ্টিত হওয়ায় অস্বাভাবিক জোয়ারে চরগজারিয়া, চর মুজাম্মেল ও তেলিরচর এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানিতে ওইসব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়া পানির স্রোতে কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ উঠতি আমন ধান ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। পানতে ভেসে গেছে অসংখ্য গবাদি পশু।
কমলনগর উপজেলার পাটারীরহাট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শাহজাহান মাস্টার জানান, মেঘনার ভাঙনে বেড়িবাঁধ বিলীন হলেও তা পুনর্নির্মিত না হওয়ায় জোয়ার বাড়লেই ওই এলাকা প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।
সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল খায়ের জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তার ইউনিয়নের জগবন্ধু ও কাদির পণ্ডিতেরহাটসহ নিম্নাঞ্চলীয় এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, জোয়ারের পানিতে তার ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে রাখা ভিজিডি’র ৭২ বস্তা চাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই সময় জোয়ারের স্রোতে কাঁচাঘর এবং রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ অসংখ্য পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে যায়।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, জোয়ারে প্লাবিত এলাকা তিনি পরিদর্শন করেছেন। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান করা হবে।
Leave a Reply