শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল ২০২১, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক
পূর্ণিমার প্রভাবে মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলার চারটি বাজারসহ ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ওই সব গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। জোয়ারের পানির স্রোতে অভ্যন্তরীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে কয়েকশ’ হেক্টর উঠতি আউশ ধান ক্ষেত ও আমনের বীজতলা।
স্থানীয়রা জানান, পূর্ণিমার প্রভাবে গত রোববার থেকে মেঘনার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়তে থাকে। মঙ্গলবার দুপুরে জোয়ার স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট বেড়ে মেঘনা নদীর তীরবর্তী কমলনগর উপজেলার চরসামছুদ্দি, মতিরহাট, নাছিরগঞ্জ, কাদিরপ-িতেরহাট, চরজগবন্ধু, লুধুয়া ফলকন ও ডিএস ফলকন এবং রামগতি উপজেলার পশ্চিম বালুরচর, বাংলাবাজার, সেবাগ্রাম, চরআলগী, চররমিজ, বড়খেরী, চরগাজী ও চরগজারিয়াসহ ১৫টি গ্রামের নিম্ন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। মেঘনার ভাঙনের কবলে পড়ে নদীতে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধের উন্মুক্ত অংশ পুনর্নির্মিত না হওয়ায় সহজেই জোয়ারের পানি ঢুকে গ্রামগুলো প্লাবিত হচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানান।
কমলনগর উপজেলার চরফলকন এলাকার কৃষক আবদুস সহিদ জানান, জোয়ারের পানিতে তার আট শতক জমির আমনের বীজতলা ও ৫৬ শতক জমির উঠতি আউশ ধান ক্ষেত তলিয়ে রয়েছে।
রামগতি উপজেলার চরগজারিয়া এলাকার মৎস্য চাষী মিল্লাদ হোসেন জানান, জোয়ারের পানিতে তার মৎস্য ঘেরের প্রায় এক লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার ছায়েফ উল্যাহ জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তার ইউনিয়নের মতিরহাটসহ নিম্নাঞ্চলীয় গ্রামগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। জোয়ারের স্রোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অভ্যন্তরীণ কাঁচা সড়কের।
রামগতি উপজেলার চরআব্দুল্যাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন জানান, চারদিকে মেঘনা নদী বেষ্টিত তার ইউনিয়নের চরগজারিয়া এলাকা জোয়ারে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে সেখানকার জনতা বাজার ও চেয়ারম্যান পানিতে তলিয়ে যায়। পানিবন্দী রয়েছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। এছাড়াও জোয়ারের পানিতে উঠতি আউশ ধান ক্ষেত তলিয়ে থাকার পাশাপাশি জোয়ারের স্রোতে অভ্যন্তরীণ ১০টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তিনি জানান।
একই উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন জানান, বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে তার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলীয় এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানির স্রোতে সোনালী গ্রাম সড়কের একটি কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
রামগতি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, জোয়ারের পানিতে আউশ ধানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে পানি নিষ্কাশন না হলে এবং জলাবদ্ধতা স্থায়ী হলে আমনের বীজতলার ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন ও রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন জানান, পূর্ণিমার প্রভাবে মেঘনার জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চলীয় এলাকাগুলো পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার খবর তারা পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে তারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন বলে জানান।
Leave a Reply