শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২০ অপরাহ্ন

কমলনগরে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে প্রভাবশালীর বাঁধ নির্মাণ : ৫০ একর জমির ফসল নষ্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক : লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অবসরপ্রাপ্ত এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ফজুমিয়ারহাট বাজার সংলগ্ন আবদুস সামাদ সড়কের ওই কালভার্টটির মুখে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় বিলের পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ একর জমির ফসল নষ্ট হতে চলায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। অতিদ্রুত কালভার্টটির মুখের বাঁধ অপসারণ করে পানি নিষ্কাশনের দাবি জানান তারা।
এলাকাবাসী জানান, ফজুমিয়ারহাট বাজারসহ দক্ষিণ-পূর্ব বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রায় ১৫ বছর আগে আবদুস সামাদ সড়কে একটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। বর্ষা মৌসুমে বাজারসহ ওই বিলের পানি কালভার্টটি দিয়ে ভুলুয়া নদীতে নিষ্কাশন হয় থাকে। কিন্তু এক মাস আগে স্থানীয় প্রভাবশালী অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মো. সাহাব উদ্দিন ওই কালভার্টটির মুখ মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করেন। এতে গত কয়েক দিনের টানাবৃষ্টির পানি আটকা পড়ে বিলটিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে বিলটির প্রায় ৫০ একর জমির আউশ ধান, আমনের বীজতলা ও শসাসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা ওই প্রভাবশালীকে কালভার্টের মুখ থেকে বাঁধ অপসারণ করে নেওয়ার জন্য বারবার বলে আসলেও তিনি তা করছেন না। উল্টো বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে আসছেন।
শাহ নেওয়াজ নামে এক কৃষক জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে ওই কালভার্টের নিচ দিয়ে বিলের পানি নিষ্কাশন হয়ে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তার দুই একর জমির আউশ ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কৃষক আবদুর রহিম জানান, বাঁধ দেওয়ার সময় ওই প্রভাবশালীকে বারবার বারণ করা হলেও তিনি শুনেননি। বরং প্রভাব খাটিয়ে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় তার ১২ শতক জমির আমনের বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।
শামছল হক নামে অপর এক কৃষক জানান, ঋণ করে ওই বিলের ৩২ শতক জমিতে তিনি শসার চাষ করেছেন। পানি জমে থাকায় গোড়া পচে শসা গাছগুলো এখন মরে যাচ্ছে। এতে তিনি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন।


কৃষক রফিক উল্যাহ, মো. হারুন ও আহসান উল্যাহ জানান, ওই বিলের ফসলের কথা বিবেচনা করে জরুরি ভিত্তিতে কালভার্টটির মুখ থেকে বাঁধ অপসারণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হোক। তা না হলে আমন মৌসুমে এ বিলের জমিগুলো অনাবাদি থেকে যাবে।
এদিকে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মো. সাহাব উদ্দিন জানান, ওই কালভার্টটির মুখেই তার জমি। ওই জমিতে তিনি ইতোমধ্যে মৎস্য খামার করেছেন এবং বাড়ি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যে কারণে তিনি কালভার্টটির মুখটি বন্ধ করে দিয়েছেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, আমি আমার জায়গায় বাঁধ দিয়েছি; সরকারি বা অন্যে কারো জায়গায় দেয়নি।
চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আকরাম হোসেন শাহেদ জানান, স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে তিনি ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। অভিযুক্ত সাহাব উদ্দিনকে কালভার্টের মুখ থেকে বাঁধ অপসারণ করার জন্য বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রকিবুল ইসলাম জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে তিনি বিষয়টি জানতে পেরেছেন। সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়ে সমস্যাটি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন:


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2018 Priyo Upakul
Design & Developed BY N Host BD
error: Content is protected !!