শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সঙ্কটে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পাঁচ বছর আগে এ হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল কাঠামো রয়েছে আগের মতোই। এর মধ্যে আবার চিকিৎসকসহ অনুমোদিত পদের অর্ধেকই শূন্য। হাসপাতালে চিকিৎসকের অনুমোদিত ১৫টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন মাত্র তিনজন। এতে করে উপজেলার আড়াই লক্ষাধিক মানুষকে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ওই তিন চিকিৎসকের। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৪৫ পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ১৮টি। এমতাবস্থায় চিকিৎসকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শূন্য পদগুলো পূরণ করে মেঘনা উপকূলীয় দরিদ্রপ্রবণ এ জনপদের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, মেঘনা উপকূলীয় এ উপজেলার দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সরকার করইতলা এলাকায় ১৯৭৪ সালে এ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন। দুই লাখ ৫২ হাজার জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এ উপজেলার মানুষদের চিকিৎসার কথা চিন্তা করে ২০১৫ সালে হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ওই বছরের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন একটি সম্প্রসারিত ভবনসহ হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এখানে নতুন করে ৫০ শয্যার পদ সৃষ্টি করা হয়নি। যে কারণে, ৩১ শয্যার জনবল কাঠামোতেই চলছে স্বাস্থ্যসেবা।
এ কাঠামো অনুযায়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার একটি, জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি ও অবস) একটি, জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) একটি, জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) একটি, জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) একটি, জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেসথেসিয়া) একটি, আবাসিক মেডিকেল মেডিকেল অফিসার একটি, মেডিকেল অফিসার তিনটি, ডেন্টাল সার্জন একটি, সহকারী সার্জন পাঁচটি, সিনিয়র স্টাফ নার্স ২০টি, মিডওয়াইফ চারটি, প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক একটি, পরিসংখ্যানবিদ একটি, ক্যাশিয়ার একটি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি) একটি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি) একটি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) একটি, উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ছয়টি, জুনিয়র মেকানিক একটি, অফিস সহায়ক দু’টি, ওয়ার্ড বয় দু’টি, আয়া দু’টি, পিয়ন কাম গার্ড একটি ও কুক মশালচি একটিসহ ৬১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে।
এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি ও অবস), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেসথেসিয়া), আবাসিক মেডিকেল মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার দু’টি, ডেন্টাল সার্জন, সহকারী সার্জন পাঁচটি, সিনিয়র স্টাফ নার্স চারটি, প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক, ক্যাশিয়ার, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল), জুনিয়র মেকানিক, অফিস সহায়ক একটি, ওয়ার্ড বয় একটি, আয়া একটি, পিয়ন কাম গার্ড ও কুক মশালচিসহ ২৮টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।
হাসপাতালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বহির্বিভাগে এখন প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৩০ জন এবং জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ জন রোগী চিকিৎসা নেন। এছাড়া অন্তর্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। কিন্তু এ জনবল সঙ্কটের কারণে কর্মরত চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রোগীদের যথাযথ সেবা দিতে পারছেন না।
হাসপাতাল সূত্র জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বেশিরভাগ সময়ই প্রশাসনের বিভিন্ন সভায় অংশ নেওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদে ব্যস্ত থাকেন। জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি ও অবস) পদে একজন চিকিৎসক থাকলেও তিনি ডেপুটেশনে ঢাকার রেলওয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। তিনজন মেডিকেল অফিসারের মধ্যে একজন ডেপুটেশনে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে, একজন বিনা বেতনে ছুটিতে এবং একজন প্রশিক্ষণজনিত ছুটিতে আছেন। যে কারণে, আবাসিক মেডিকেল অফিসারের দায়িত্বপালনকারী ডা. মীর মো. আমিনুল ইসলাম মঞ্জু, জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. মো. নাছিরুজ্জামান ও ডা. কাজী একরামুল হক এই তিনজনকেই সকল বিভাগের রোগীদের দেখতে হয়।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মীর মো. আমিনুল ইসলাম মঞ্জু জানান, এসব সঙ্কটের মধ্যেও রোগীদের সেবা দিতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ নাজমুল হাসান জানান, শুধু চিকিৎসকই নয়; কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যায় এ হাসপাতালটি জর্জরিত। এখানে টেকনিশিয়ান না থাকায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এক্স-রে মেশিন অকেজো অবস্থায় রয়েছে। টেকনিশিয়ানের অভাবে প্যাথলিজ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। হাসপাতালটি ৫০ শয্যার হলেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কোনো পদ সৃষ্টিই হয়নি। ফলে দুর্ভোগের শেষ না থাকায় এ উপজেলাবাসীকে কাঙ্খিত সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
তিনি জানান, জনবল সঙ্কটসহ বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তিনি একাধিকবার লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। সমস্যাগুলো সমাধানে তিনি কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী জানান, এ এলাকার গরীব-দুঃখী মানুষের চিকিৎসার কথা বিবেচনা করে এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক পদায়ন খুবই জরুরি। এ ব্যাপারে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করছেন।
Leave a Reply