শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:২২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : উজানের পানির চাপে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। তীব্র স্রোতের মুখে মুহূর্তের মধ্যে মেঘনা গর্ভে বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে মেঘনা রুদ্রমূর্তি ধারণ করায় উপজেলার লুধুয়া ফলকন এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগের নির্মাণাধীন বাঁধটি নদীতে ধসে পড়েছে। গত দুই দিনে ৪০০ মিটারের বাঁধটির প্রায় ২৫০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে নদী তীরবর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’টি দ্বিতল ভবন, পাকা মসজিদ ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ভাঙনকবলিত এলাকার লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেনী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুছা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এটিএম এহছানুল হক চৌধুরী ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, ওই এলাকার ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত চরফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুইটি দ্বিতল ভবন, প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরোনো বাঘার হাওলা ঈদগা জামে মসজিদ ও আবুয়াল হোসেন তালুকদার কমিউনিটি ক্লিনিক রক্ষায় জুলাই মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ড আপদকালীন একটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রায় চার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রকল্পটির আওতায় সেখানকার ৪শ’ মিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। কাজটি শুরু হওয়ার পর এলাকাবাসী নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কিন্তু গত দুই দিনের মেঘনার ভাঙনের তীব্রতা এলাকাবাসীর সেই স্বপ্ন কেড়ে নিতে শুরু করেছে।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার সন্ধ্যা থেকে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন শুরু হলে নির্মাণীধীন ৪শ’ মিটারের বাঁধটির প্রায় ২৫০ মিটার ধসে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যেই বালুভর্তি জিও ও টিউব ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে রাতেই স্কুল, মসজিদ ও কমিউনিটি ক্লিনিকের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে এ ভবনগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাঁধ তীরবর্তী এলাকা ছাড়াও চরফলকন ইউনিয়নের ৭ নম্বর, পাটারীরহাট ইউনিয়নের ২, ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় মেঘনার তীব্র ভাঙন চলছে। গত দুই সপ্তাহে ওইসব এলাকার বেশ কয়েকটি বসতবাড়িসহ বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
চরফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা পরিষদের সদস্য মোশারেফ হোসেন বাঘা জানান, বিদ্যালয়টি রক্ষায় ব্যক্তিগত অর্থাায়নে প্রথমে তারা জংলা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে স্থানীয় সাংসদের প্রচেষ্টায় এ জিও ব্যাগ বাঁধের কাজটি চলছে। হঠাৎ করে ভাঙনের ভয়াবহতায় বাঁধ ধসে বিদ্যালয়ের একটি দ্বিতল ভবন নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। হুমকিতে রয়েছে সদ্য নির্মিত বিদ্যালয়ের অপর দ্বিতল ভবনটি। সেটি রক্ষা করতে না পারলে বিদ্যালয়ের কয়েকশ’ ছাত্রছাত্রীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি চরফলকন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মফিজুল ইসলাম বাঘা জানান, বাঘার হাওলা ঈদগা ও ঈদগা জামে মসজিদটি প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরোনো। সেই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি আজ নদীগর্ভে বিলীনের পথে। জংলা বাঁধ ও জিও ব্যাগের বাঁধসহ শত চেষ্টা করেও মসজিদটি রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এতে এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন।
আবুয়াল হোসেন তালুকদার কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার কামরুল হাসান জানান, বুধবার রাতে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হলে ক্লিনিকের মালামাল রাতেই তিনি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হাসান সেখানে ছুটে যান এবং ক্লিনিকের কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে অন্যত্র চালিয়ে যেতে বলেন।
স্থানীয় সাংসদের প্রতিনিধি হিসেবে আপদকালীন জিও ব্যাগের বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম নুরুল আমিন মাস্টার জানান, প্রকল্পটির আওতায় এ পর্যন্ত বালুভর্তি প্রায় ৫০ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। স্কুল-মসজিদ ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো রক্ষায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পরিদর্শন শেষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেনী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শাহজাহান জানান, স্কুল ভবনটি রক্ষায় ঠিকাদারকে অতিদ্রুত দেড় হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করতে বলা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সেখানে আরও কাজ করা হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান জানান, ভবনগুলো রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। ইতোমধ্যে সেখানে আরও ১৫ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের অনুমতি নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
Leave a Reply