শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন

মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে আলো ছড়াচ্ছেন কম্পিউটার প্রকৌশলী মাসুদ

মো. মামুন হোসেন সরকার : সমাজে বিভিন্ন প্রকার সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে আলো ছড়াচ্ছেন কম্পিউটার প্রকৌশলী এ টি এম ইফতেখার হোসেন মাসুদ। তার এ সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামে ও হাতিবান্ধা উপজেলার মানুষরে কাছে তিনি পরিচিত ‘আলোকিত মানুষ’ হিসেবে। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হলে ও রাজনীতির ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকেন সব সময়।। দারিদ্র্যতা, বেকারত্ব এবং প্রায়োগিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং যোগাযোগের যখন তীব্র সংকট। পাশাপাশি মাদকসহ নানা সামাজিক অপকর্মে লিপ্ত হওয়া ভবিষ্যত প্রজন্মকে নিয়ে অভিভাবক ও সুশীল সমাজে যখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করতে থাকে। ঠিক সেই সময় এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নদ্রষ্টা হয়ে আগমন ঘটে কম্পিউটার প্রকৌশলী জনাব ইফতেখার হোসেন মাসুদ নামে এক যুবকের ।
সমাজ হিতৈষী এ যুবকটি তখন বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে মাদকবিরোধী কর্মশালার আয়োজন করেন এবং প্রোজেক্টরের মাধ্যমে প্রেরনাদায়ক ভিডিও দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের মাদকমুক্ত জীবন গড়ার জন্যে উৎসাহিত করেন। চিকিৎসা সেবার নিমিত্তে স্থানীয় ক্লিনিকে এম্বুলেন্সসহ চিকিৎসার যন্ত্রপাতি প্রদান করেছেন।এতিম অসহায়দের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য প্রদান, গরীব মেধাবীদের শিক্ষা বৃত্তি প্রদান, মাদক মুক্ত সমাজ গঠন, যুব সমাজকে স্বকর্মসংস্থানে উৎসাহ প্রদান, এতিম শিশুদের ঈদে নতুন পোশাক বিতরণ, গ্রাম্য নারীদের আয়ের ব্যবস্থার জন্য গরু বিতরণ, এছাড়া নারী ও বেকারদের বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদানসহ নানাবিধ উন্নয়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি হয় তার এই “ আলোকিত বাংলাদেশ ”সংস্থাটি।

তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপসহ শিক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করেছেন। শিক্ষার মান্নোয়ন, শিক্ষা বৃত্তি, অস্বচ্ছল পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশে প্রেরণ, জঙ্গি মুক্ত সমাজ গঠন, বেকার যুব সমাজকে স্বনির্ভরশীল করা ও নারীদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করায় তিনি ‘আলোকিত মানুষ’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন সমাজে।

ইফতেখার হোসেন মাসুদ লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নে ১৯৮১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। লালমনিরহাট-১ আসনের (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোতাহার হোসেন ও বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মোসলেমা খাতুনের তিন পুত্রের মধ্যে দ্বিতীয় পুত্র। তাঁর শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি বড়খাতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তাঁর বাল্যকাল স্থানীয় স্কুলে কাটলেও পরবর্তীতে অদম্য মেধার স্বাক্ষর রেখে তিনি ১৯৯৪ সালে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে ভর্তির সুযোগ লাভ করেন । সেখানেও তিনি প্রবল মেধা ও দৃঢ় মননশীলতার পরিচয় দেন। এরপর ১৯৯৮ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ডের বিজ্ঞান বিভাগে থেকে দশম স্থান লাভ করে উত্তীর্ণ হন। পরে ১৯৯৯-২০০০ সহস্রাব্দ পরিবর্তনের সময়কালে তিনি কলেজ প্রিফেক্ট নির্বাচিত হন। সেখানেই নেতৃত্ব দেয়ার অসীম গুণাবলী অর্জন করেন। পরবর্তীতে ২০০০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে রাজশাহী বোর্ডে ২য় স্থানসহ সারা বাংলাদেশে ৬ষ্ঠ স্থান অর্জন করে ক্যাডেট কলেজের পড়াশোনার সফল সমাপ্তি করেন। যদিও উচ্চতর ডিগ্রির জন্য তিনি তখন বুয়েট ও ঢাবিতে চান্স পান, তথাপিও এরপর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ডাকে সাড়া দিয়ে স্কলারশিপ অর্জন করে উচ্চশিক্ষার জন্য তুরস্কের `Istanbul Technical University ‘  এ পাড়ি জমান। সেখানে কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন। অবশেষে সেখানে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন এবং কিছুকাল পেশাগত অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০১০ সালে দেশে ফিরে এসে একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান শুরু করেন এবং তাঁর নিজ এলাকা হাতীবান্ধা-পাটগ্রামে সামাজিক উন্নয়ন মূলক কার্যক্রমে পুরোদমে আত্মনিয়োগ করেন। এরপর ২০১৩ সালে গড়ে তুলেন সম্পূর্ণ অলাভজনক সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান ‘আলোকিত বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’।যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির সুখ্যাতি দেশে ও বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
গড্ডিমারীর ইউনিয়নের মেডিকেল পডুয়া নিরঞ্জন বলেন“ আমি বর্তমানে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে শেষ বর্ষে পড়ছি। আমার মেডিকেল কলেছে পড়ার মূল কারিগর আলোকিত “বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন” ও ইফতেখার হোসেন মাসুদ। মেডিকেল কলেছে চান্স পেয়ে যখন আমার পরিবার পড়ালেখার খরচ চালানো অসমর্থ্য হয় ঠিক সেই সময় আলোকিত বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন আমার পাশে দাঁড়ায় ও স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে। স্কলারশিপ পেয়ে আজ মেডিকেল কলেজের পড়াশোনা শেষ করছে। সেজন্য আলোকিত বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও ইফতেখার হোসেন মাসুদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ। পড়াশোনা শেষে প্রতিষ্ঠিত সুনাগরিক হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে চাই।
আল আমিন নামের অন্য একজন তুরস্কের শিক্ষার্থী বলেন,“ বর্তমানে তুরস্কের অন্যতম সেরা মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়ে বস্ত্র প্রকৌশলী বিভাগে প্রথম বর্ষে অধ্যয়ন করছি। আমার এতোদূর আসার পেছনে “আলোকিত বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন” ও ইফতেখার হোসেন মাসুদ ভাই নিবেদিত প্রাণ হিসাবে কাজ করেছে। আমি যখন এসএসসি পাশ করি তখন খুব ইচ্ছে ছিল বাইরের কোনো কলেজে ভর্তি হবো। কিন্তু আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে সে সুযোগ হয়নি। কেননা আমার বাবার ছোট চায়ের দোকানের আয়ের উপর ভিত্তি করে আমার পক্ষে বাহিরে পড়াশোনা করা অসম্ভব ছিল। তাই ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা দেশের বাইরে আসতে পারবো এটা ছিলো আমার জন্য কল্পনারও বাইরে।

তিস্তার চরাঞ্চলের রমিজা বেগম বলেন,“ অনেকদিন ঘরে লাইট ছিল না। আলোকিত বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন সৌরবিদ্যুতের আলো ব্যবস্থা করে দেয়। বাচ্চারা এখন সন্ধ্যা হলেই পড়তে বসতে পারে। ”
মতিয়ার রহমান নামে একজন গ্রামবাসী বলেন,“ চট্রগ্রামে কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ বিদ্যুৎতের শর্ক লেগে পঙ্গু হয়ে যাই। আমার এই পঙ্গুত্ব জীবনে আলো ছড়িয়েছে আলোকিত বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান বলেন,“ইফতেখার হোসেন মাসুদ ভাইয়ের আলোকিত বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন মানবসেবামূলক সংগঠন এটি। বাবার আর্থিক সংকটের সংসারে যখন আমার পড়াশোনা প্রায় থেমে যাওয়ার উপক্রম। আমার লালিত স্বপ্ন, মা বাবার আশা বিনষ্টের পথে। ঠিক তখনি আলোকিত বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন আমাকে বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেয়। ”

এ বিষয়ে পাটগ্রাম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান নিলু, বাউরা আরেফা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার ও জোংড়া ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এমদাদুল হক। তাদের মতে ইফতেষার হোসেন মাসুদ শিক্ষানুরাগী ও নিঃস্বার্থবান মানুষ। তিনি সমাজকে আলোকিত করতে প্রশংসনিয় ভূমিকা রাখছেন। যা সাধারণত কেউ করেন না। তিনি দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের খোঁজে বের করে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করছেন। শিক্ষ বৃত্তির মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ পাঠাচ্ছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে মাদকবিরোধী, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহের ও জঙ্গির কুফল নিয়ে সভা সেমিনার করছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে বিভিন্ন শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করেন।
এ বিষয়ে কম্পিউটার প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন মাসুদ বলেন,“ আমি যত দিন বেঁচে আছি মানুষের সেবা করে বেচে থাকতে চাই। আলোকিত বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন নামক স্বপ্নটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সকল স্তরের মানুষ যেভাবে এগিয়ে এসেছে তাতে আমি বিমুগ্ধ ও অভিভূত। সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিনি একদিন তাঁর এলাকা পেরিয়ে সমগ্র জেলাসহ সারা দেশের জন্য কাজ করবেন। আলোকিত হবে সারা দেশ। আলোকিত বাংলাদেশ নামক স্বপ্নটি বাস্তবায়নের জন্য প্রতিনিয়ত অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন:


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2018 Priyo Upakul
Design & Developed BY N Host BD
error: Content is protected !!